বর্তমান সময়ে পিত্তথলির পাথর খুব সাধারণ একটি সমস্যা। প্রাথমিক অবস্থায় অনেকেই পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারে না। এমনকি লক্ষণও প্রকাশ পায় না অনেক সময়। নীরবেই দেহে এর প্রতিক্রিয়ায় নানা রোগ ডেকে আনতে পারে। সুতরাং দেহের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য সচেতন ও সতর্কতা প্রয়োজন। রোগ সৃষ্টির শুরুতেই অবশ্যই চিকিৎসা করা অতি প্রয়োজন। অবহেলা বা অযত্নে এটি মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

পিত্তথলিতে পাথর কেন হয়?

পিত্তথলি লিভার থেকে তৈরি পিত্তরস বা বাইল জমা রাখে এবং চর্বি জাতীয় খাবার খেলে হজমের জন্য পিত্তথলি থেকে পিত্তরস বেরিয়ে আমাদের খাদ্য নালীতে চলে আসে এবং হজমে সহায়তা করে। পিত্তরস পিত্তথলিতে থাকার সময়কালে পিত্তরস তথা বাইলের কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। পিত্তরস হলুদ রঙের তরল পদার্থ। এতে থাকে কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম, লবণ, এসিড ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান। এই পিত্তরসের বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হয় পিত্তথলির পাথর। পিত্ত একটি তরল পদার্থ যার মধ্যে কিছু কঠিন পদার্থ থাকে। তরল পদার্থের পরিমাণ কমে গেলে কঠিন পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে পাথর হতে পারে। আর কোনো কারণে যদি পিত্তথলির সঙ্কোচন ও প্রসারণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে। তাছাড়া চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে যারা চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খায়, যারা ভেজাল খাবার খান, যাদের ডায়াবেটিস আছে, লিভারের রোগে যারা আক্রান্ত, যেসব নারী বারবার গর্ভবর্তী হন, যারা মোটা ও ওজন বেশি তাদের পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে।

পিত্তথলিতে পাথরের লক্ষণ

পিত্তথলিতে পাথর হলে বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো উপসর্গ থাকে না। বেশিরভাগ সময়েই পিত্তপাথর ধরা পড়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে। তাছাড়া নিম্নলিখিত ৮ টি লক্ষণ প্রকাশ পেলে পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে কি না তা পরিক্ষা করা উচিত।

  • বুকের ডান পাঁজরের নিচে ব্যথা শুরু হতে পারে তা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ব্যথা ধীরে ধীরে ডান কাঁধ বরাবর ছড়িংয়ে পড়ে, এমন সময় জ্বরও হতে পারে।
  • পিঠের বা পেটের মাঝ বরাবর এবং বুকের ভেতরও ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
  • বমি বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • পায়খানার রঙ সাদা এবং পায়খানার সাথে চর্বি যেতে পারে।

বদহজম বা চর্বি জাতীয় খাবার খেলেই বদহজম হয়।

  • বারবার ঢেঁকুর ওটা।
  • পেটের উপরে ডান পাশে ব্যথা করা।
  • খাওয়ার পর গলায় তেতো ভাব লাগা।

পিত্তথলিতে পাথরের চিকিৎসা

পিত্তথলির পাথরে চিকিৎসার প্রধান উপাদান হলো অপারেশন। অপারেশন দুই ভাবে করা যায়।

  • সরাসরি পেট কেটে
  • লেপারোস্কপিক মেশিনের সাহায্যে।
  • আধুনিক চিকিৎসা জগতে লেপারোস্কপিক পদ্ধতি খুবই সুবিধাজনক। ল্যাপারোস্কপির অর্থ হলো ক্যামেরা দিয়ে দেখা। পেটের যে অংশে পিত্তথলি অবস্থিত সেখানে ছোট ছোট ছিদ্র করে সূক্ষ্ম সরু যন্ত্র দিয়ে পিত্তথলির অপসারণ করা হয়। এতে অপারেশনের পর ব্যথা ও রক্ষক্ষরণ কম হয়। রোগী দু’-একদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
  • পিত্তথলিতে পাথর নিশ্চিত হওয়ার পর তা অপারেশন করে নেয়া খুবই প্রয়োজন। অনেকে ওষুধ খাওয়ার পর সামান্য ব্যথা কমে আসে, সমস্যাও করে না; ফলে অপারেশন করেন না। অবহেলায় বসে থাকেন। তা আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারে। বেশি দেরি না করে অপারেশন করে ফেলা ভালো। তা না হলে এ রোগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। অনেক দিন পাথর নিয়ে থাকলে শরীরে জন্ডিস, অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ সৃষ্টি এমনকি পিত্তথলিতে ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে।
  • পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (BSMMU) HBP and Liver Transplant Surgery বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সাইফ উদ্দিন যিনি বংলাদেশে হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়াটিক, এবং লিভার প্রতিস্থাপন সার্জারিতে একজন অগ্রদুত। এই অভিজ্ঞ চিকিৎসক ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ১০০ রোগীর পিত্তথলির পাথর এবং লিভার সিস্ট সংক্রান্ত রোগের সার্জারি করেন । তিনি তার দীর্ঘদিনের গবেষণা কাজে লাগিয়ে দেশে ও বিদেশে বহু রোগীর হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়াটিক, এবং লিভার প্রতিস্থাপন বিষয়ক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে আসছেন ।

Dr Md Saief Uddin
MBBS, FCPS (Surgery), FRCS (Glasgow)
MRCS(Edin), MRCPS (Glasgow)
Associate Professor of HBP and Liver Transplant Surgery
Department of HBP and Liver Transplant Surgery
Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University (BSMMU)