হেপাটাইটিস হলো লিভারের একটি প্রদাহ। দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে হেপাটাইটিসের বিভিন্ন ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। হেপাটাইটিসের ভাইরাস প্রাথমিক অবস্থায় শরীরে কোনো উপসর্গ প্রকাশ না করলেও ধীরে ধীরে মারাত্মক হয়ে ওঠে। যদিও এই রোগ ছোঁয়াচে নয়। হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্তের ফলে লিভারের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। প্রতি বছর লিভারের এই রোগে বিশ্বব্যাপী এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

                                     হেপাটাইটিস এর প্রকারভেদ ও লক্ষণ

হেপাটাইটিস ভাইরাস সাধারণত ৫ রুপে মানবদেহে জায়গা করে নেয়। এই ৫ ধরণ হচ্ছে- হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই। এই রোগ ৬ মাস বা এর কম স্থায়ী হলে ‘একিউট বা স্বল্পমেয়াদী’ এবং ৬ মাসের বেশী স্থায়ী হলে এটিকে ‘ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদী’ হেপাটাইটিস বলে।

	‘হেপাটাইটিস এ’ দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের ক্ষেত্রে লিভার ফুলে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, জ্বর, বমি ও জয়েন্টে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
	‘হেপাটাইটিস বি’ ভাইরাস লিভারে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এ কারণে রোগীর বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, কোলিক, ত্বকের হলুদ রঙের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
	‘হেপাটাইটিস সি’ বেশ জটিল ভাইরাস। এটি হেপাটাইটিস এ ও বি এর চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। রক্ত দেওয়া-নেওয়া, শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগের সময় যদি জীবাণুযুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, সেখান থেকে হেপাটাইটিস সি এর সংক্রমণ ঘটে। হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ব্যক্তির তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ফলে লিভারের ক্ষত ও বেশ কয়েক বছর পর সিরোসিস সৃষ্টি করে।
*‘হেপাটাইটিস ডি’ তে বেশি আক্রান্ত হন হেপাটাইটিস বি ও সি এর রোগীরা। এটি দূষিত রক্তের সংক্রমণ, সংক্রামিত সূঁচ ব্যবহার বা শেভিংয়ের অন্যান্য কিটগুলির ব্যবহারের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। লিভারের সংক্রমণের ফলে বমি ও হালকা জ্বর হয়।
	‘হেপাটাইটিস ই’ দূষিত খাবার দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগী ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, ত্বকের হলুদ হওয়া ও হালকা জ্বর অনুভব করে। এ সংক্রমণের ফলে রোগী ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, ফ্যাকাশে ত্বক ও চেহারা ও জ্বরের মতো লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।

                                            হেপাটাইটিসের চিকিৎসা

সাধারণত হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘ই’ রোগে আক্রান্ত রোগীরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম, নিয়মিত স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ এবং অল্প কিছু ওষুধের মাধ্যমে সেরে উঠেন। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত নিরব/নিষ্ক্রিয় বাহকদের দীর্ঘদিন কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজনীয় বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণীত ‘ক্রনিক একটিভ বা সক্রিয়’ রোগীদের সুনির্দিষ্ট ওষুধের প্রয়োজন হয় যা দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হয়। বর্তমানে হেপাটাইটিসে ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক মানসম্মত বিভিন্ন ওষুধ এখন বাংলাদেশের সবখানেই পাওয়া যাচ্ছে তাই এই রোগ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে পরিপূর্ণ বিশ্রাম এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ঔষধ সেবন করলে এই রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়।